মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় মামলায় তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে মামলার দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনে ষষ্ঠ সাক্ষির জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
বৃধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষি হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনাস্থলের অদূরে বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফায় সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষি ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এছাড়া রোববার থেকে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিন পর্যন্ত জবানবন্দি দিয়েছেন আরো আরো চারজন সাক্ষি। এতে মামলায় আরো ৭৭ জন সাক্ষির জবানবন্দি গ্রহণ বাকি রয়েছে।
বুধবার সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজেন ভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
সকাল ১০ টায় মামলার ষষ্ঠ সাক্ষির জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়। তা শেষ হয় সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে। এরপর আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। আর সেটা শেষ দুপুর ২ টায়।
পিপি ফরিদুল বলেন, সকাল ১০ টায় আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। এতে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করেছেন ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম। মামলায় এ পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষির মধ্যে ছয়জনের জবানবন্দি এবং আসামিদের আইনজীবীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
“ এরপর পরবর্তীতে মামলার অপরাপর সাক্ষিদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিন ধার্য করে আদেশ দেন আদালত। ”
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “ মামলায় ১৫ আসামির মধ্যে তিনজন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) সদস্য রয়েছে। তারা ( এপিবিএন সদস্য ) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা প্রত্যাহার চেয়ে তাদের আইনজীবীরা তিনটি আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনগুলো আমলে নিয়ে নথিভূক্ত করেছেন। ”
বাদিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সিনহা হত্যা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি মসজিদের নিচে অবস্থান করছিলেন। পরে গুলির শব্দ শুনে মসজিদের ছাদে উঠে ঘটনার প্রত্যক্ষ করেন।
তবে নির্দেশনা থাকায় আদালতের কাছে শহীদুল ইসলাম যে জবানবন্দি দিয়েছেন সেটার বিষয়বস্তু গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেন বাদির এ আইনজীবী।
মোস্তফা বলেন, “ সাক্ষিদের জবানবন্দি গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে প্রকাশ না করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সাক্ষি তার জবানবন্দিতে ঘটনা কিভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, ঘটনাস্থলে সিনহাসহ আসামিদের মধ্যে কার কি ধরণের ভূমিকা দেখেছেন, সেখানে কি কি ধরণের ঘটনা ঘটেছে; তার প্রকৃত চিত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছেন। ”
এতে ঘটনার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে বলেন, বাদির এ আইনজীবী।
তবে ষষ্ঠ সাক্ষির জবানবন্দি প্রদানকারি শহীদুল ইসলামের বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন বলে দাবি, আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি প্রদানকারি শহীদুল ইসলাম একই সঙ্গে মসজিদটির ইমাম, খতিব ও হেফজখানার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। কিন্তু এসব দায়িত্বে তাকে (শহীদুল) নিযোগের ব্যাপারে এমন কোন নির্দশনপত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে যেমন দিতে পারেননি, তেমনি আদালতের কাছে উপস্থাপন করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।
“ তিনি (শহীদুল) বলেছেন, তিনি (শহীদুল) সমস্ত ঘটনাটি মসজিদের ছাদের উপর থেকে। দাঁড়িয়েই কিন্তু ঘটনাটি দেখেছেন। তিনি এও স্বীকারও করে নিয়েছেন, মসজিদ এবং কথিত ঘটনাস্থলের সামনে কিন্তু অনেকগুলো গাছ। মসজিদের যে দোতলা ছাদ সেখানে থেকে মেরিন ড্রাইভ আনেক উঁচুতে। ”
“ সেখানে আমাদের কথাটি হল, কথিত ঘটনাস্থ থেকে যে দেখা-শোনা, যে কথাগুলো বলেছেন; কে, কি করেছে সেটা দেখার কথা বলেছেন। তার কোনটাই সত্য নয়। ”
আসামির এ আইনজীবী বলেন, “ এক্ষেত্রে আমাদের কথাটি হল, অত দূরে থেকে কানে কানে কথা শোনা, কোন কিছু ঘটনা দেখা; কাউকেও শনাক্ত করা এগুলো কোনভাবেই সম্ভব নয়। ”
মাদকপাচার, মানবপাচার, চোরাচালান, সন্ত্রাস ও ডাকাতির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারি কর্মকর্তা হিসেবে দৃঢ় ভূমিকার কারণে একটি অশুভ চক্র ওসি প্রদীপের ক্ষুদ্ধ ছিল এবং ওই চক্রটির ইন্ধনে মামলার সাক্ষিরা মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত জবানবন্দি দিচ্ছেন বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় র্যাবকে।
ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।
ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
পরে র্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষি এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এর ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষি করা হয় ৮৩ জনকে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply